কোম্পানীগঞ্জে পুলিশের উপর হা ম লা য় ৫ পুলিশ আ হ ত
নিউজ ডেস্ক
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় পুলিশের উপর হামলায় ৫ পুলিশ আহত। শনিবার রাতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও শীর্ষ পাথর-বালু লুটেরা হিসেবে পরিচিত আব্দুল অদুদ আলফু মিয়াকে গ্রেপ্তারের পরদিনই এ হামলার ঘটনা ঘটে। এতে কর্তব্যরত পাঁচজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। আহতদের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ জানায়, রবিবার দুপুরে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা চত্বরের সামনে সার্জেন্টের নেতৃত্বে একটি চেকপোস্ট বসানো হয়। সেখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যরা নিয়মিত তল্লাশি চালাচ্ছিলেন। এ সময় একটি ট্রাক বৈধ কাগজপত্র না থাকায় আটক করা হয়।
এর কিছুক্ষণ পর স্থানীয় ট্রাক ও বাস শ্রমিক ইউনিয়নের সেক্রেটারি মাহফুজসহ দুইজন বাস শ্রমিক ঘটনাস্থলে এসে পুলিশের সঙ্গে বিতণ্ডায় জড়ান। তারা চেকপোস্টে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের লাঞ্ছিত করেন, কাজে বাধা দেন এবং আটক ট্রাকটি জোরপূর্বক ছিনিয়ে নিয়ে যান। এ সময় ডিউটিরত পাঁচজন পুলিশ সদস্য আহত হন।
পুলিশের দাবি, ঘটনাস্থলে একজন সার্জেন্ট, একজন সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই)সহ কয়েকজন পোশাক পরিহিত সদস্য দায়িত্বে ছিলেন। হামলার সময় তারা বড় কোনো সংঘাত এড়াতে ধৈর্য ধারণ করেন।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রতন শেখ জানান, `রবিবার বেলা ২টার দিকে উপজেলার সামনে চেকপোস্ট বসিয়ে গাড়ির কাগজপত্র তল্লাশি চলছিল। এ সময় স্থানীয় সন্ত্রাসী চক্র পুলিশের ওপর আকস্মিক হামলা চালায়। এতে পাঁচজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে, আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।’
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, হামলাকারীরা মূলত উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল অদুদ আলফু মিয়ার অনুসারী। আলফু মিয়া দীর্ঘদিন ধরে সীমান্তবর্তী সাদাপাথর কোয়ারি এলাকা থেকে অবৈধ পাথর উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। শনিবার তাকে সাদাপাথর লুটের এক মামলায় গ্রেপ্তার করে পুলিশ। রবিবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে তাকে জেলহাজতে পাঠানো হয়।
পুলিশের আশঙ্কা, আলফু মিয়ার গ্রেপ্তারের প্রতিক্রিয়ায় তার অনুসারীরা এলাকায় নাশকতা ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। এ কারণে উপজেলায় একাধিক স্থানে নিরাপত্তা জোরদার ও চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়।
ওসি রতন শেখ আরও বলেন, “আমরা আশঙ্কা করছিলাম আলফু মিয়ার লাঠিয়াল বাহিনী এলাকায় বিশৃঙ্খলা ঘটাতে পারে। সেই কারণে তল্লাশি কার্যক্রম চলছিল।
পুলিশ জানিয়েছে, হামলার ঘটনার পর শ্রমিক সংগঠনের একটি অংশ ফেসবুকে লাইভ করে পুলিশের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিকর প্রচারণা চালাচ্ছে। তাদের উদ্দেশ্য হলো চেকপোস্টের বৈধতা নিয়ে জনগণের মনে সন্দেহ তৈরি করা এবং পুলিশের ভাবমূর্তি নষ্ট করা।
কোম্পানীগঞ্জ থানার এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, `এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন। হামলাকারীদের শনাক্ত করতে ঘটনাস্থলের ভিডিও ফুটেজ ও স্থানীয় সূত্র ব্যবহার করা হচ্ছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
স্থানীয়রা জানান, আলফু মিয়ার নেতৃত্বে কোম্পানীগঞ্জের পাথর ও বালু খেকো সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয়। তারা প্রশাসনের অভিযানের মুখে পড়ে ক্ষুব্ধ। এ ঘটনার মাধ্যমে সেই গোষ্ঠী পুলিশের কার্যক্রমে বাধা দিতে চেয়েছে।
উল্লেখ্য, সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা সীমান্তঘেঁষা এলাকায় অবৈধভাবে পাথর ও বালু উত্তোলন দীর্ঘদিন ধরে একটি বড় অপরাধচক্রের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সম্প্রতি এ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয় প্রশাসন ও পুলিশ। আলফু মিয়া গ্রেপ্তারের পর থেকেই এলাকা অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চলছে বলে স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে।
Leave a Reply