1. admin@dailybdfreepress.com : admin :
November 18, 2025, 3:29 am

ইসলামে অমুসলিমদের সঙ্গে আচরণ ও ধর্ম পালনের স্বাধীনতা

  • Update Time : বৃহস্পতিবার, অক্টোবর ২, ২০২৫
  • 97 Time View

ইসলামে অমুসলিমদের সঙ্গে আচরণ ও ধর্ম পালনের স্বাধীনতা

 

ড. আবু সালেহ মুহাম্মদ তোহা

 

ইসলাম সমগ্র মানবজাতির কল্যাণ ও শান্তির বার্তা নিয়ে এসেছে। কোরআন ও সুন্নাহতে মুসলমানদের শুধু নিজেদের মধ্যে নয়; বরং অমুসলিমদের সঙ্গেও ন্যায়, সদাচার ও মানবিক আচরণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইসলাম ধর্ম পালনে স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে এবং এ ক্ষেত্রে কোনো জবরদস্তি নেই বলে ঘোষণা করেছে। এর মাধ্যমে প্রতীয়মান হয়, ইসলামী সমাজব্যবস্থা সর্বজনীন কল্যাণে সমৃদ্ধ এবং ন্যায় ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট।

সব মানুষের সঙ্গে মানবিক আচরণ : ইসলামের অন্যতম শিক্ষা হলো সব মানুষের প্রতি উদার মনোভাব পোষণ ও মানবিক আচরণ প্রদর্শন করা। কারণ মানুষ হিসেবে সবাই সমান; ধর্ম বা বর্ণের পার্থক্য থাকলেও সৃষ্টিগতভাবে সব মানুষই আদম ও হাওয়া (আ.)-এর সন্তান। তাই আর্থিক লেনদেন, ব্যবসা-বাণিজ্য ও সেবার আদান-প্রদান সব ধর্মের মানুষের সঙ্গে পরিচালনা করতে কোনো বাধা নেই। রাসুলুল্লাহ (সা.) অনেকবার ইহুদির কাছ থেকে ঋণ নিয়েছেন এবং যথাসময়ে তা পরিশোধ করেছেন।

পারস্পরিক সাহায্য-সহযোগিতা ও অন্যের প্রয়োজনে এগিয়ে আসা ইসলামী সমাজব্যবস্থার একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য। প্রতিবেশী যে ধর্মেরই হোক, তার প্রতি সদয় আচরণ করা ও সহমর্মিতা প্রদর্শন করা ইসলামের নির্দেশ। এমনকি অমুসলিম রোগীকে দেখতে যাওয়াও নবীজির সুন্নত। মানুষ হিসেবে মানবিক আচরণে ধর্ম কেনো বাধা নয়।

কারণ মহান আল্লাহ সব মানুষকে সম্মানিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি।’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৭০)

নিজ নিজ ধর্ম পালনের স্বাধীনতা : ইসলাম নিজ নিজ ধর্ম পালনের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং এটিকে একটি মৌলিক অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে। ইসলাম কখনো জোরপূর্বক ধর্মান্তরের শিক্ষা দেয় না, বরং প্রত্যেককে নিজের বিশ্বাস অনুযায়ী জীবনযাপনের সুযোগ প্রদান করে। কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘ধর্মে কোনো জবরদস্তি নেই।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ২৫৬)

আবার অন্যত্র বলা হয়েছে, ‘অতএব, যার ইচ্ছা সে ঈমান আনুক, আর যার ইচ্ছা সে কুফর করুক।’ (সুরা : কাহফ, আয়াত : ২৯)। এ আয়াতগুলো স্পষ্ট করে যে মানুষ তার ধর্ম বিশ্বাসে এবং তা প্রতিপালনে স্বাধীন।

ধর্ম পালনে নিরাপত্তা ও সুরক্ষা : রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় ইহুদি ও অন্য ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে যে ঐতিহাসিক সনদ সম্পাদন করেছিলেন, সেখানে ধর্মীয় স্বাধীনতার পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও নেতৃত্বের বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছিল। খলিফা উমর (রা.) বায়তুল মুকাদ্দাস জয় করার পর খ্রিস্টানদের গির্জা অক্ষত রাখেন এবং তাদের ধর্ম পালনের নিশ্চয়তা দেন। ইসলামী আইন অনুযায়ী চুক্তিবদ্ধ অমুসলিমরা (জিম্মি) রাষ্ট্রীয়ভাবে পূর্ণ সুরক্ষা পেয়ে থাকে। হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি চুক্তিবদ্ধ সম্প্রদায়ের কোনো ব্যক্তির ওপর জুলম করবে বা তার প্রাপ্য কম দেবে কিংবা তাকে তার সামর্থ্যের বাইরে কিছু করতে বাধ্য করবে অথবা তার সন্তুষ্টিমূলক সম্মতি ছাড়া তার কাছ থেকে কিছু গ্রহণ করবে, কিয়ামতের দিন আমি তার বিপক্ষে বাদী হবো।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৩০৫২)

অমুসলিমদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ না

করা : ইসলাম একদিকে অমুসলিমদের ধর্ম পালনের পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছে, অন্যদিকে মুসলমানদের জন্য ঈমান রক্ষা ও দ্বিনের অক্ষুণ্নতা বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছে। ফলে অমুসলিমরা নিজেদের উৎসব ও আচার-অনুষ্ঠান পালন করতে পারলেও মুসলমানরা তাতে অংশ নিতে পারে না। কারণ এতে দ্বিনের সঙ্গে আপস ঘটে। ধর্ম পালনের ক্ষেত্রে ইসলামে আপসের কোনো সুযোগ নেই। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের দ্বিন তোমাদের, আমার দ্বিন আমার।’ (সুরা : কাফিরুন, আয়াত : ৬)

এ আয়াত দ্বিনের বিশুদ্ধতা রক্ষার পাশাপাশি অন্য ধর্মের স্বাধীনতাকেও স্বীকৃতি দিয়েছে।

ধর্মীয় অনুষ্ঠানের শুভেচ্ছা বিনিময় না

করা : অমুসলিমদের বিশেষ ধর্মীয় উৎসবে শুভেচ্ছা জানানো ইসলামে অনুমোদিত নয়। ইবনুল কাইয়িম আল-জাওজি (রহ.) বলেন, ‘কাফিরদের বিশেষ ধর্মীয় নিদর্শন, যেমন—তাদের ধর্মীয় উৎসব বা উপবাস (যা তাদের সঙ্গে বিশেষভাবে সম্পৃক্ত) উপলক্ষে তাদের অভিনন্দন জানানো সর্বসম্মতিক্রমে হারাম। এটি এমন, যেন কেউ কাউকে তার ক্রুশের সামনে সিজদা করার জন্য অভিনন্দন জানায়; বরং এটি শরাব পান করা, মানুষ হত্যা করা বা অবৈধ যৌনকর্মে লিপ্ত হওয়ার অভিনন্দন জানানোর চেয়েও গুরুতর পাপ এবং মারাত্মক ঘৃণ্য। অনেকেই যারা দ্বিনের মর্যাদা বোঝে না, অজ্ঞাতসারে এ ধরনের কাজ করে ফেলে, অথচ তারা বুঝতেই পারে না যে কী ভয়াবহ কাজ করেছে। অতএব, যে কেউ কোনো বান্দাকে কোনো গুনাহ, বিদআত কিংবা কুফরের কাজে অভিনন্দন জানায়, সে আসলে আল্লাহর রোষ ও ঘৃণা ডেকে আনে।’ (আহকাম আহলুয জিম্মাহ : ১/১৪৪)

তবে হ্যাঁ, অমুসলিমদের নিজস্ব ধর্ম ও ধর্মীয় কর্তব্য পালনে যাতে তাদের কোনো ক্ষতি বা অসুবিধা না হয়, সে ব্যাপারে মুসলমানদের সহযোগিতামূলক মনোভাব প্রকাশ করতে কোনো অসুবিধা নেই।

পরিশেষে বলা যায়, ইসলাম ন্যায়, সদাচার ও মানবিকতার শিক্ষা দিয়েছে। অমুসলিমদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, লেনদেন ও মানবিক আচরণ করা ইসলামের নির্দেশ। একই সঙ্গে ইসলাম প্রত্যেককে তার ধর্ম পালনের পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছে। তবে মুসলমানদের জন্য নিজেদের ঈমান ও আকিদা রক্ষা করা অপরিহার্য; তাই অমুসলিমদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ বা শুভেচ্ছাবিনিময় থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। সর্বোপরি বলা যায়, ইসলাম মানবাধিকার রক্ষায় সর্বজনীন এবং ন্যায় ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, আরবি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

বিডি প্রতিদিন

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2019 Effective News
Theme Customized By Positiveit.us