1. admin@dailybdfreepress.com : admin :
November 18, 2025, 5:01 am

চারিত্রিক উৎকর্ষ সব কল্যাণের উৎস

  • Update Time : সোমবার, অক্টোবর ৬, ২০২৫
  • 86 Time View

চারিত্রিক উৎকর্ষ সব কল্যাণের উৎস
মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা

ঈমানের পাশাপাশি মানুষের সবচেয়ে বড় সম্পদ উত্তম চরিত্র। এটি এমন একটি গুণ, যা মানুষের আচার-আচরণ ও অন্যদের প্রতি ব্যবহারের সৌন্দর্যকে প্রকাশ করে। উত্তম চরিত্র মানে হলো, মানুষের সঙ্গে এমন আচরণ করা, যেমন আচরণ আপনি নিজের জন্য কামনা করেন, যা শরিয়তসম্মত, ন্যায়সংগত ও সদ্ভাবপূর্ণ। এর মধ্যে আছে মুখে হাসি রাখা, কোমল ব্যবহার করা, মন্দের জবাবে ভালো ব্যবহার করা ইত্যাদি।

রাসুল (সা.) বলেছেন, তুমি যেখানেই থাকো আল্লাহ‌ তাআলাকে ভয় করো, মন্দ কাজের পরপরই ভালো কাজ করো, তাতে মন্দ দূর হয়ে যাবে এবং মানুষের সঙ্গে উত্তম আচরণ করো। (তিরমিজি, হাদিস : ১৯৮৭)
শায়খ ইবনু সাদি (রহ.) বলেছেন, ‌‌উত্তম চরিত্র একটি মহান ও সম্মানিত গুণ। এর ভিত্তি হলো, ধৈর্য, সহনশীলতা ও নৈতিকতার প্রতি আগ্রহ। এর ফল হলো, অন্যদের প্রতি ক্ষমাশীলতা, কষ্টদাতাকে ক্ষমা করা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় সৃষ্টির কল্যাণে নিয়োজিত থাকা।

এসব গুণকে মানুষের চারিত্রিক উৎকর্ষ বাড়িয়ে দেয়, মানুষকে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের রাস্তা করে দেয়। মহান আল্লাহও তাঁর বান্দাদের এসব গুণ অর্জনের নির্দেশ দিয়েছেন । ইরশাদ হয়েছে, ক্ষমাশীলতার নীতি অবলম্বন করো, সত্য-সঠিক কাজের আদেশ দাও আর জাহিলদের এড়িয়ে চলো। (সুরা : আরাফ, আয়াত : ১৯৯)

রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের যে ব্যক্তির চরিত্র ও আচরণ সর্বোত্তম তোমাদের মধ্যে সে-ই আমার নিকট সর্বাধিক প্রিয় এবং কিয়ামত দিবসেও আমার খুবই নিকটে থাকবে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২০১৮)

অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, আবু দারদা (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, সচ্চরিত্র ও সদাচারই দাঁড়িপাল্লার মধ্যে সবচেয়ে ভারী হবে। সচ্চরিত্রবান ও সদাচারী ব্যক্তি তার সদাচার ও চারিত্রিক মাধুর্য দ্বারা অবশ্যই রোজাদার ও নামাজির পর্যায়ে পৌঁছে যায়।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২০০৩)

আর দুনিয়াতে এই গুণের দ্বারা শত্রুরাও বন্ধু হয়ে যায়। মহান আল্লাহ এই চরিত্রকে সৌভাগ্যের চাবি আখ্যা দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘আর ভালো ও মন্দ সমান হতে পারে না।

মন্দকে প্রতিহত করো তা দ্বারা যা উত্কৃষ্টতর। ফলে তোমার ও যার মধ্যে শত্রুতা রয়েছে সে যেন হয়ে যাবে তোমার অন্তরঙ্গ বন্ধু। আর এটি তারাই প্রাপ্ত হবে যারা ধৈর্যধারণ করবে, আর এর অধিকারী কেবল তারাই হয় যারা মহাভাগ্যবান।’ (সুরা : ফুসসিলাত, আয়াত : ৩৪-৩৫)
উত্তম চরিত্রের ফজিলত

জান্নাতে প্রবেশের অন্যতম কারণ : আবু উমামাহ (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ন্যায়সংগত হওয়া সত্ত্বেও ঝগড়া পরিহার করবে আমি তার জন্য জান্নাতের বেষ্টনীর মধ্যে একটি ঘরের জিম্মাদার; আর যে ব্যক্তি তামাশার ছলেও মিথ্যা বলে না আমি তার জন্য জান্নাতের মাঝখানে একটি ঘরের জিম্মাদার আর যে ব্যক্তি তার চরিত্রকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করেছে আমি তার জন্য জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানে অবস্থিত একটি ঘরের জিম্মাদার। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮০০)

অন্য হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.)-কে প্রশ্ন করা হলো, কোন কর্ম সবচেয়ে বেশি পরিমাণ মানুষকে জান্নাতে নিয়ে যাবে। তিনি বলেন, আল্লাহ‌ভীতি, সদাচার ও উত্তম চরিত্র। আবার তাঁকে প্রশ্ন করা হলো, কোন কাজটি সবচেয়ে বেশি পরিমাণ মানুষকে জাহান্নামে নিয়ে যাবে। তিনি বলেন, মুখ ও লজ্জা স্থান। (তিরমিজি, হাদিস : ২০০৪)

উত্তম চরিত্রের অধিকারী শ্রেষ্ঠ মানুষ : মহানবী (সা.) বলতেন, ‘তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই সর্বোত্তম যে নৈতিকতায় সর্বোত্তম।’ (বুখারি, হাদিস : ৩৫৫৯)

আল্লাহ ও রাসুলের ভালোবাসা লাভের মাধ্যম : আল্লাহ বলেন, ‘আর সুকর্ম করো। নিশ্চয় আল্লাহ সুকর্মশীলদের ভালোবাসেন।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৯৫)

আর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন তোমাদের মধ্যে আমার প্রিয়তম এবং অবস্থানে আমার নিকটতম ব্যক্তিদের কিছু সেই লোক হবে যারা তোমাদের মধ্যে চরিত্রে শ্রেষ্ঠতম।’ (রিয়াদুস সালেহিন, হাদিস : ১৭৪৭)

পরিপূর্ণ ঈমানের নিদর্শন : আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে ঈমানে পরিপূর্ণ মুসলমান হচ্ছে সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তি।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১১৬২)

কিয়ামতের দিনে ওজনে সবচেয়ে ভারী আমল : মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘মিজানের পাল্লায় সচ্চরিত্রের চেয়ে অধিক ভারী আর কিছুই নেই।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৭৯৯)

আমল ও মর্যাদা বৃদ্ধির কারণ : আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, নিশ্চয়ই মুমিন ব্যক্তি তার ভালো চরিত্রের মাধ্যমে (দিনের) সাওম পালনকারী ও (রাতের) তাহাজ্জুদগুজারির সমান মর্যাদা লাভ করতে পারে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৭৯৮)

ঘরে বরকত ও আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি : আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত, একদা রাসুল (সা.) তাঁকে বলেন, যাকে কোমলতার কোনো অংশ দেওয়া হয়, তাকে দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণের অংশ দেওয়া হয়, আত্মীয়তার সম্পর্ক, উত্তম চরিত্র ও প্রতিবেশীর সঙ্গে ভালো ব্যবহার করলে-হায়াত কাল দীর্ঘায়িত করে এবং সন্তান-সন্ততিতে বরকত দান করে। (আহমদ)

অতএব ইহকাল ও পরকালের সফলতার জন্য আমাদের উচিত, চারিত্রিক পবিত্রতা অর্জনে যত্নবান হওয়া।

বিডি-প্রতিদিন

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2019 Effective News
Theme Customized By Positiveit.us