মুসলমান হিসেবে গৌরববোধ থাকতে হবে
মাওলানা ফরিদ উদ্দীন মাসঊদ
দ্বিন সম্পর্কে এবং নিজের জীবন পরিচালনার বিধান বিষয়ে থাকতে হবে গৌরববোধ। হতে হবে আত্মসচেতন। আম্বিয়া কেরাম আলাইহিমুস সাল্লাম নিজেদের অবস্থান, মানসাব ও পদমর্যাদার বিষয়ে অত্যন্ত সচেতন ছিলেন। আল্লাহর পক্ষ থেকে যে দায়িত্ব অর্পিত ছিলেন, সে বিষয়ে কখনো সংশয়ে ভুগতেন না তাঁরা।
দায়িত্ব প্রতিপালনে কখনো অবহেলা বা আপসকামিতার আশ্রয় নেননি, রাজনীতিকদের মতো সুবিধাবাদের শিকার হননি। সমাজের কী প্রতিক্রিয়া হবে, কে কী বলবে সেদিকে কোনো দিন দৃষ্টি দেননি, কারো বিরূপতায় বিচলিত হননি। নিজের ও নিজের দর্শন, পথ ও পদ্ধতির বিষয়ে ছিলেন সংশয়হীন, স্থির, প্রাজ্ঞ ও নিঃশঙ্ক। লোকপ্রশংসা বা লোকনিন্দার কোনো পরোয়া ছিল না তাঁদের।
কোরআন মাজিদে একাধিক স্থানে নবী (সা.)-কে উপলক্ষ করে ইরশাদ হয়েছে—‘যে নির্দেশ আপনি আল্লাহর পক্ষ থেকে পেয়েছেন তা শুনিয়ে দিন, আর শিরককারীদের (নিন্দা ও সমালোচনা) উপেক্ষা করুন।’
(সুরা : আল হিজর, আয়াত : ৯৪)
কোনো সুবিধার দিকে চেয়ে নয়, এমনকি কিছু ছাড় দিলে অনেকেই ইসলাম গ্রহণ করবে; সেদিকেরও কোনো চিন্তা ছিল না। কুরাইশদের পর আরবের সবচেয়ে সম্মানিত গোত্র তায়েফের সাকিফ গোত্রের সম্মানিত সর্দাররা ইসলাম গ্রহণের সময় দেব-দেবীদের ক্ষেত্রে কিছুদিনের জন্য, শেষে অন্তত মাসখানেকের জন্য হলেও ছাড় দিতে নবীজি (সা.)-এর কাছে অনুরোধ করেন। নবীজি (সা.) এক দিনের জন্যও ছাড় দিতে সম্মত হননি।
এরা নামাজের ক্ষেত্রেও ছাড় দিতে আবেদন জানালে তিনি স্পষ্ট বলে দিয়েছিলেন, যে ব্যবস্থায় নামাজ নেই, সেখানে কোনো মঙ্গল নেই।
কুফরি শক্তির একান্ত বাসনা ছিল, নবীজি (সা.) যদি ছাড় দেন তাহলে তারাও ছাড় দেবে। আল্লাহপাক ইরশাদ করেন, ‘তারা কামনা করে আপনি যদি নরম হন, ছাড় দেন তাহলে তারাও নরম হবে, ছাড় দেবে।’
(সুরা : আল কলাম, আয়াত : ৯)
কিন্তু আল্লাহপাক নবী (সা.)-কে সম্বোধন করে বলেছিলেন, কারো দিকে দৃকপাতের দরকার নেই—‘হে রাসুল, আপনার প্রভুর পক্ষ থেকে যা কিছু নাজিল হয়েছে সবই পৌঁছে দিন। যদি এমন না করেন তাহলে আপনার পয়গাম পৌঁছানোর কাজ সম্পন্ন হলো না।
আর লোকদের ভয়, সে সম্পর্কে নিশ্চিত থাকুন আল্লাহ মানুষদের (নিন্দা-দুশমনি) থেকে আপনাকে অবশ্যই রক্ষা করবেন।’ (সুরা : আল মায়িদা, আয়াত : ৬৭)
এত মর্যাদাবোধ ও সচেতনতা ছিল তাঁর যে কোনো ধরনের চাটুকারিতা ও সুবিধাবাদের ধারেকাছেও নবীজি (সা.) যাননি।
একজন মুসলিম দ্বিন ও শরিয়তের কোনো বিধানের বিষয়ে যেন হীনম্মন্যতায় না ভোগে। মুমিনদের আল্লাহপাক নিজেদের দ্বিনের ব্যাপারে গৌরববোধের নির্দেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং বলে, আমি তো অবশ্যই মুসলিমদের একজন।’
এই আত্মসচেতনতা, এই মর্যাদাবোধ, এই গৌরববোধ মুমিনের ভূষণ।
তবে স্পষ্ট যে মুমিনের নিজের জীবনবোধের ওপর গৌরব আছে বটে, কিন্তু অহংকার পোষণ করে না, অন্যায় জাত্যাভিমানে সে ভোগে না কখনো। কারো প্রতি সে কখনো হেয় ধারণা করে না। সে তো সহ-অবস্থানে বিশ্বাসী, শান্তিপ্রিয়। অন্য ধর্মাবলম্বীকেও স্বধর্ম পালনের সুযোগ দেয়। ইসলামের ইতিহাস ও শরিয়তে এর ভূরি ভূরি উদাহরণ বিদ্যমান। (মিযাজে শরীআত অবলম্বনে)
বিডি-প্রতিদিন
Leave a Reply